Published : 26 May 2025, 04:21 PM
দীর্ঘদিন ধরেই জানা আছে যে, একটি তারা যত দ্রুত ঘোরে এর চৌম্বক শক্তি তত বেশি হয়। এ শক্তির কারণেই তারায় বড় বড় বিস্ফোরণ, দাগ বা সানস্পট ও শক্তির বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটে।
সাধারণভাবে যেসব তারা দ্রুত ঘোরে সেগুলোর চৌম্বক শক্তি বেশি হয়। তবে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই কেবল এমনটি ঘটে। সেই সীমায় পৌঁছানোর পর তারার চৌম্বক শক্তি আর বাড়ে না, বরং স্থির হয়ে যায়। এ ঘটনা ‘স্যাচুরেশন’ নামে পরিচিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
তবে ‘অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ড. জি ইউ-এর নেতৃত্বে করা এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এই নিয়ম সব সময় খাটে না, বিশেষ করে যখন দুটি তারা খুব কাছাকাছি ঘুরতে থাকে তার বেলায়, যাকে বলে ‘ক্লোজ বাইনারি সিস্টেম’।
চীনের ল্যামোস্ট টেলিস্কোপ ও ইউরোপের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গাইয়া থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ড. ইউ ও তার গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছে, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি চৌম্বকীয় কার্যকলাপ দেখায় এ ধরনের অনেক কাছাকাছি ঘোরা তারাযুগল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে এসব তারার চৌম্বক শক্তি ধীরে ধীরে কমার বদলে বরং বাড়তেই থাকে।
আরও রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে, এসব তারা অনেক দ্রুত ঘোরে, বিশেষ করে অর্ধেক দিনেরও কম সময়ে একবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে এরা। এমন বিরল ক্ষেত্রে এদের চৌম্বকীয় কার্যকলাপ আসলে কমতে শুরু করে, যা রহস্যময় একটি ঘটনা ও এটি ‘সুপারস্যাচুরেশন’ নামে পরিচিত।
এ কমে যাওয়া বিষয়টি বিজ্ঞানীদের পুরানো ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যারা অনুমান করতেন ঘূর্ণনের কারণে চৌম্বক শক্তি বাড়তেই থাকবে।
গবেষকরা বলছেন, এ অদ্ভুত আচরণের মূল কারণ দুটি তারার মধ্যে থাকা মহাকর্ষীয় টান বা জোয়ার-ভাটার মতো শক্তি। এই শক্তি তারা দুটির ঘূর্ণন ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে এমনভাবে প্রভাবিত করে, যা একক কোনো তারার মধ্যে দেখা মেলে না। মূলত অন্য তারার এত কাছাকাছি থাকা এদের চৌম্বকীয় শক্তিকে স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে মোচড় বা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, এ আবিষ্কার কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্যই নয়, বরং এর আরও বড় গুরুত্ব রয়েছে। চৌম্বকীয় কার্যকলাপ তারার আশপাশের মহাকাশ পরিবেশকে প্রভাবিত করে, যা কাছাকাছি থাকা যে কোনও গ্রহের সম্ভাব্য বসবাসের সম্ভাবনার ওপরও প্রভাব ফেলে।
কোনো গ্রহ যদি এমন তারার আশপাশে ঘোরে যার খুব বেশি চৌম্বক শক্তি রয়েছে তবে সেটি সেই গ্রহের বাতাসে শক্তিশালী রশ্মি ও কণার আঘাত হানতে পারে, যা সেখানে প্রাণের টিকে থাকাকে কঠিন করে তুলতে পারে।
বিভিন্ন তারা কীভাবে বদলে যায় ও একে অন্যের সঙ্গে এদের সম্পর্ক এদের আচরণকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে তা নিয়ে ফের নতুন প্রশ্ন সামনে এনেছে এ গবেষণা।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাবিশ্বকে বোঝার ব্যাপারে যতই অনুমান করা হোক না কেন, মহাবিশ্ব এখনও অনেক বিস্ময় ধারণ করে রয়েছে নিজের মধ্যে।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’তে।