Published : 03 Jun 2025, 08:22 PM
নুতন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবকে গতানুগতিক উল্লেখ করে এর কারণে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেছেন, বিগত সরকারের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করে, ওই বাজেটের ধারাবহিকতা রক্ষা করা হয়েছে।
সোমবার ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার বনানীর চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে জি এম কাদের বলেন, “বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে গণ্য করা যায়। সে হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
বাজেটে নতুনত্ব কিছু নেই উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “রুটিন কাজ, বাজেট দিতে হবে তাই দেওয়া, গতানুগতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা। গত বাজেট কাঠামো থেকে এবারের বাজেটে তেমন কোন ব্যত্যয় বা সংস্কার লক্ষ্যনীয় নয়। তবে বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে।
“যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতির আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।”
বাজেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির ব্যবস্থা নেই দাবি করে জি এম কাদের বলেন, “প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে।”
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোন সুখবর বা স্বস্তি আনছে না বলে মত দেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যার বেশিরভাগই ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। ফ্যাসিস্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গ্যাসের বিষয়ে বাজেটে বায়বীয় কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে।
“কালো টাকা সাদা করতে দেওয়া নীতি বহির্ভূত বা গর্হিত কাজ। বর্তমান সরকারও দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি বাজেটে। রাজস্ব দিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে কীভাবে? সামাজিক নিরাপত্তাখাতে যেসব কথা বলা হয়েছে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এই বাজেট দিয়ে সরকার কীভাবে কাজ করবে তা পরিষ্কার নয়।”