Published : 03 Jun 2025, 06:27 PM
বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতেই প্রস্তাবিত বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি এও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঋণের ‘দুষ্ট চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানী ওসমসানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এ বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতে। এবং তার সাথে ভর্তুকি আছে, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি আছে; সেটা রাখতে হচ্ছে কারণ মূল্যস্ফীতিকেও আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে গত বছর দায়িত্বগ্রহণের আগে থেকেই আমরা পেয়েছি।
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখবেন যে জ্বালানিতে বিদেশিদের পাওনা পুরোটা আমরা পরিশোধ করে দিয়ে এখন অন্তত স্থিতি অবস্থায় এসেছি। আমরা আসলে যেটা চাচ্ছি, সেটা হলো- ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের যে দুষ্ট চক্র, এটা থেকে বেরিয়ে আসার; এক বাজেটে হবে না, অন্তত শুরুটা যেন আমরা করে যেতে পারি।”
নতুন বাজেটকে সংজ্ঞায়িত করার প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেকে বলেছেন, গতানুগতিক বাজেট, বড় কোনো চমক নাই। কৌশলগত বা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন তারা দেখতে পাচ্ছে না।
“অন্তর্বর্তী সরকার যেটা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, সেখান থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল- যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বরাদ্দ এগুলোর দিকে তাকানো হয়েছে। বৈষম্য কমানো এগুলোর জন্য আসলেই কি কিছু করেছি কি না; এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কি না সংখ্যাগুলোর মধ্যে।
“এটা বুঝতে হবে বাজেট চলমান প্রক্রিয়া, এটা শূন্য থেকে শুরু হয় না। যেমন যে কর বিন্যাস এখনও আছে, এ কর ব্যবস্থার মধ্যে তো অনেক অসংগতি আছে, অনেক সামঞ্জস্যহীনতা আছে।”
একটি অসংগতি কমাতে গেলে আরেকটি অসংগতি দেখা দেয় মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “একদম সুন্দর অবস্থা থেকে শুরু করলে তাত্ত্বিকভাবে আমরা সুন্দর একটা করনীতি করতে পারতাম। এখন তো আমরা একটা জায়গায় আছি, সেখান থেকে এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে।”
উন্নয়ন বাজেটের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “সমাপ্ত প্রায় অর্থবছর ও প্রস্তাবিত আগামী অর্থবছরের বাজেটে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, সেগুলোর প্রায় সবই পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া প্রকল্প এবং চলমান প্রকল্প এগুলো।
“এর কারণ হল যে, এগুলোর অধিকাংশই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অত্যাধিক সংখ্যায় এইসব প্রকল্প আছে। এতোবেশি সংখ্যক প্রকল্পের অর্থ সংস্থানও সেসময় বিবেচনা করা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ১১১৩টা প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি শুধু নতুন প্রকল্প। বাকিগুলো সবই চলমান, মানে আমাদের প্রকল্প না।”
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “ এইযে ২০-৩০টি নতুন প্রকল্প বললাম, এগুলোও কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী গত বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের নথিভুক্ত, যেটাকে বলে বরাদ্দহীনভাবে সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা, সেগুলোও ঠিক আমাদের প্রকল্প না।
“মোদ্দা কথা হল, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এবং আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা যেটুকু বাস্তবায়ন করব, আমরা শুধু পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাটছাঁট করছি, পুনর্বিন্যাস করছি, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিচ্ছি এবং সম্ভব হলে দ্রুত সমাপ্ত করছি।”
তিনি বলেন, “প্রশ্ন হল, একটা পুল নির্মাণ হচ্ছে বা রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে; এর মাঝখানে তো আমরা ওটাকে থামিয়ে দিয়ে কৌশলগতভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিতে পারব না, ওটাকে শেষ না করলে তো অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি।”
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের ডান পাশে বসেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তারপর বসেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
অর্থ উপদেষ্টার বামে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ ও অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার।