Published : 29 May 2025, 01:49 AM
নীতিমালা অনুমোদনের পর ব্রোকারেজ কোম্পানির লাইসেন্স গ্রহণ, পণ্য নির্ধারণ ও বিনিয়োগ নীতিমালা প্রস্তুতের মত প্রক্রিয়া শেষে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট চালুর সম্ভাবনার কথা বলেছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার।
এর মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার ‘ডেরিভেটিভ’ পণ্যের যুগে প্রবেশ করবে, যা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসই বছর পাঁচেক আগে কমোডিটি মার্কেট পরিচালনার অনুমোদন ও নিবন্ধন পেলে কারিগরি প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিরিউটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত মঙ্গলবার সিএসইর ‘কমোডিটি ডেরিভেটিভস প্রবিধান নীতিমালা, ২০২৫’ অনুমোদন দেয়।
এতে দেশে কমোডিটি মার্কেটে লেনদেন চালুর পথে আরেক ধাপ অগ্রগতি হয়।
এখন এ বাজার চালুর পরবর্তী কাজগুলো দ্রুত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কারিগরি প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের জন্য নীতিমালা ও পণ্য নির্ধারণের কাজটি করা হবে।’’
এসব কাজ শেষ করতে কয়েক মাস সময় লাগার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আশা করা যায়, আগামী ডিসেম্বরের কোনো এক সময়ে কমোডিটি মার্কেটে লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে।’’
দেশের অপর ও বড় স্টক এক্সচেঞ্জ হচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করতে হয় বিভিন্ন ব্রোকারেজ কোম্পানির মাধ্যমে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই দুই স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত। কিছু ব্রোকারেজ শুধু একটি স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করে।
কমোডিটি মার্কেটে লেনদেন করতে ব্রোকারেজ কোম্পানিগুলোকে নতুন করে আরো একটি লাইসেন্স নিতে হবে বিএসইসির কাছ থেকে।
নীতিমালা হওয়ায় এখন কমোডিটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে আগ্রহী ব্রোকারেজ কোম্পানিকে।
কমোডিটি মার্কেট হচ্ছে, যেখানে পণ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে, মাঠে, গুদামে বা সমুদ্র পথে নিজেদের জিম্মায় থাকে। এর বিপরীতে ইলেকট্রনিক শেয়ার ছাড়া হয়। পণ্যের বদলে এসব শেয়ার হাতবদল হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ে এসব লেনদেনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়।
এ মার্কেট চালু হলে উদ্যোক্তা বা কোম্পানি জরুরি অর্থের প্রয়োজনে আগাম পণ্য বিক্রি করতে বড় একটি প্লাটফর্ম পাবে।
ডিএসইতে দৈনিক যে পরিমাণ শেয়ার হাতবদল হয়, তার ৪ শতাংশের মত হয় সিএসইতে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সীমিত থাকা সিএসই এর টিকে থাকা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এখন ডেরিভেটিভস পণ্য বাজারে এনে টিকে থাকার চেষ্টায় থাকবে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
ডেরিভেটিভ হল একটি আর্থিক চুক্তি যার মূল্য অন্য কিছুর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। ডেরিভেটিভগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ বা ওভার দ্য কাউন্টারে লেনদেন হয়।
বাংলাদেশে কমোডিটি মার্কেটের বাজারের আকার কেমন হবে সেটির কোনো ধারণাপত্র কমিশন বা সিএসই এর পক্ষ থেকে এখনো করা হয়নি।
দেশের পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বন্ড ও শেয়ার লেনদেন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন চালু করা হয় সাধারণ ব্যক্তি বিনিয়োগকারিদের জন্যও।
এজন্য বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে দেশে সর্বপ্রথম কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে ২০১৭ সালে সরকারি উদ্যোগে সম্ভ্যাব্যতা যাচাই করা হয়।
এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ প্রকাশ করে সিএসই। তারপর মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিএসইসির অনুমোদন পায় সিএসই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করছে, পুঁজিবাজারে কমোডিটি ডেরিভেটিভ পণ্য লেনদেন শুরু হলে পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আসবে।
সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় ২০২০ সালে বিএসইসির কাছ থেকে নিবন্ধন পায়। এরপরই কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার কাজগুলো শুরু করে। পুরো মাকের্ট চালু করতে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।