Published : 24 May 2025, 09:48 PM
দেশের পুঁজিবাজারকে ‘ক্যাসিনোর’ সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ঢাকায় শনিবার এক আলোচনা সভায় সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ক্যাসিনো হয়ে গেছে। এখানে সবাই খেলা করে বের হয়ে যায়। দিন শেষে ক্যাসিনো মালিকের লাভ থাকে।
“জুয়ায় লাভবান হওয়া ব্যক্তির চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বেশি থাকে। গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি।”
ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট ইন বাংলাদেশ ডিসকোর্স: ফিলোসফি অ্যান্ড প্র্যাকটিস’ শিরোনামে এ সভা হয়। আয়োজক ছিল ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।
সেখানে আমীর খসরু বলেন, “১৯৯৬ ও ২০১০ সালসহ পুঁজিবাজারের সমস্যার সময় বিএনপি ক্ষমতা ছিল না। বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে কোনো ধরনের বিপর্যয় ঘটেনি; আর্থিক খাতে সমস্যা হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পুঁজিবাজারকে ধারণ করবে।”
আমির খসরু বলেন, “পুঁজিবাজারকে এখন যেভাবে দেখা হচ্ছে, মনে হয় অর্থনীতির বাইরের কোনো অংশ। বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজারে প্রতিবছর লাখ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়, কেন বাংলাদেশ সেই বিনিয়োগ পায় না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।’’
সভায় মূল উপস্থাপনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। তার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকাই পাচার হয়।’’
তিনি বলেন, “অপরাধের শাস্তি যদি না হয়, তখন অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা যায় না। আমরা দেখেছি ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শেয়ারবাজারে অনিয়ম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়; তার কোনো বিচার হয়নি।’’
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলোতে পুঁজিবাজার গুরুত্ব পায়নি বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যে পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে কিন্তু পুঁজিবাজার নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কখনোই পুঁজিবাজারকে রাখা হয়নি। মুদ্রানীতি প্রণয়নের সময়েও পুঁজিবাজারকে রেখে করা হয় না এখনও।
“আগামী ২০৩৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর অর্থায়ন ব্যাংক খাত করতে পারবে না। এজন্য পুঁজিবাজার হতে পারে বিকল্প।”
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান মুশতাক হুসাইন খান বলেন, ‘‘অর্থনীতিসহ সব খাতে সংস্কার চাইছে সবাই। সংস্কার সবাই চায়, কিন্তু কে সংস্কার করবে? সংস্কারের প্রক্রিয়াটা কেউ জানে না।’’
সংস্কার যাদের স্বার্থ রক্ষা করবে, যারা সংস্কারে উপকৃত হবে এমন গোষ্ঠীর সংখ্যা খুবই কম মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্থানীয় কোম্পানির ব্যবসার মডেলটি স্বচ্ছ না। তারা সংস্কারে ভয় পায়। তারা মনে করে, সংস্কার করলে মুনাফা করা যাবে না। সংস্কার তারাই চায়, যাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা আছে, আন্তর্জাতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এখানে তো জোর দিতে হবে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনাতেও গুরুত্ব দিতে হবে পুঁজিবাজারকে।’’
পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ৭৫টি সুপারিশ আসার তথ্য দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মোহসিন চৌধুরী।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘২০১৫ সালে ভিয়েতনামের পুঁজিবাজার আমাদের কাছাকাছি ছিল। এখন তারা শতগুণ এগিয়েছে। এমনকি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানের মত দেশের পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে আমাদের চেয়ে। সম্ভাবনা থাকার পরও কেন বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।’’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবারক হোসাইন বলেন, “বছরে যে প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে, তার ২৫ শতাংশই ড্রেনেজ (বের করে নেওয়া) হয়। এটা বন্ধ করতে পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।’’
এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক তাসনুভা জাবিন বলেন, ‘‘নতুন দল হিসেবে আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এ বিষয়ে পৃথক হব; অন্তত কিছুটা হলেও আলাদা হব- নতুন প্রজন্ম তাই চায়।’’
আলোচনায় বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ(ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চিটাগাঙ স্টক এক্সচেঞ্জের(সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান।