Published : 28 May 2025, 09:28 PM
অন্তবর্তীকালীন সরকারে ‘পচন ধরেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে তারুণ্যের সমাবেশে তিনি বলেন, “এই সরকারের অভ্যন্তরে, মাথা থেকে পচন ধরেছে, নিচ পর্যন্ত পচে গেছে। এই সরকার যদি এভাবে চালায় (দেশ পরিচালনা) আরও, আওয়ামী লীগ যা করেছে তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।”
এজন্য অবশ্যই দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে আব্বাস বলেন, “নির্বাচনে যে কেউ আসুক, একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিরাপদ থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা‘য় যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে এই সমাবেশ হয়। কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত পুরো এলাকায় লাখো মানুষের সমুদ্রে পরিণত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “এই সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষিত একটা সরকার, আস্থার প্রতীক ছিল। এই নয় মাসের কাজ থেকে আমরা কিছু পাইনি। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা।”
তিনি বলেন, “এদেশের মানুষ বোকা নয়, স্টারলিংক ছাড়া আমরা চলেছি এতদিন, ওয়াইফাই ছাড়াও চলেছি, ভালোই ছিল। এখন স্টারলিংক আসছে। কার জন্য আনছেন? ওই আরকান আর্মির জন্য? করিডোর কার জন্য? এখান দিয়ে আরাকান আর্মির মাল-মসল্লা যাবে?
“সেন্ট মার্টিন কার জন্য? বিদেশি কোনো সেবাদাসের হাতে তুলে দেয়ার জন্য? এই তরুণ সমাজ, এই যুব সমাজ যদি আমার কথা বুঝে থাকেন একজন তরুণ বেঁচে থাকতে এদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা আমরা কখনো বিঘ্নিত হতে দেব না।”
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমি জানতে চাই, কী ধরণের পরিবর্তন হবে, মানচিত্র বড় হবে না ছোট হবে, এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন।
“ওদের কাজকর্ম, কথাবার্তায় দেশপ্রেমিক মানুষের ভেতরে আজকে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আমরা যখন ভোটের কথা বলি, উনারা তখন সংস্কারের কথা বলেন। কিন্তু নয় মাসে সংস্কার করতে পারলেন না। আমরা যখন কাজের কথা বলি, তখন অপকর্মের কথা বলেন। আপনারা শেষ করতে পারেন না। আমি বলতে চাই, আপনারা কোনো কাজ শেষ করতে পারবেন না।”
‘বিচারের সাথে নির্বাচনকে সম্পৃক্ত করার অর্থ হয় না’
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা সবচাইতে বেশি মামলায় নির্যাতিত। মামলা আরও জোরদারভাবে পরিচালনা হোক এটা আমরা চাই। এই বিচারের সাথে নির্বাচনকে সম্পৃক্ত করার কোনো অর্থ হয় না।
“আমরা সেইদিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে কথা দিয়ে এসেছি, বিএনপি যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসে তাহলে সংস্কার এবং মামলার বিচার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করবে। সেজন্য সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোনো যুক্তি নাই।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “তরুণ প্রজন্মকে বলব, ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। গণতন্ত্র ফেরাতে হবে, এটাই হোক আমাদের প্রতিশ্রুতি।”
‘নয়া পল্টনে তারুণ্যের সুনামি’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আজকে তারুণ্যের সুনামি হয়েছে বাংলাদেশে। লক্ষ লক্ষ রুণ যেভাবে আজকে উপস্থিত হয়েছে, তারা একটা বার্তা দিচ্ছে, সেই বার্তা হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের পথ হচ্ছে নির্বাচন।
“সেই নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করা চলবে না। সংস্কারের কথা বলে রোডম্যাপ পেছানোর সুযোগ নাই, বিচারের কথা বলে রোডম্যাপ পেছানোর সুযোগ নাই।”
‘জনগণ পদত্যাগের নাটক দেখেছে’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, আমরা কারো পদত্যাগ চাইনি। পদত্যাগের নাটক দেখেছেন। আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অতি অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ চেয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য যদি কথা বলি সেটা যদি অপরাধ হয় সেই অপরাধ আমরা বারংবার করতে থাকব।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, এই সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, আদালতের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ইশরাক হোসেনের শপথ পাঠ এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে।
“অন্যথায় যদি এই অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের দাবিতে, নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশের মানুষকে আন্দোলন করতে হয়, সেটা হবে ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়।”
যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।