Published : 26 May 2025, 01:06 PM
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালটি (এনসিটি) দুবাইভিত্তিক টার্মিনাল অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া নিয়ে চলমান বিতর্ক ঘিরে সঠিক সিদ্ধান্তটি কি হওয়া উচিত তা নিশ্চিত করতে অনেকগুলো প্রাসঙ্গিক ও আবশ্যক বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান এই ডিপি ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুযায়ী, তারা পৃথিবীর ৪০টি দেশে বন্দর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের পরিচালনার আওতায় বিশ্বের ১০ শতাংশ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
তবু রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্র ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কতখানি কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, কতখানি লাভবান হবে এবং নিরাপত্তা প্রসঙ্গ সামাল দিতে পারবে তা গভীর আলোচনা ও উপলব্ধির দাবি রাখে। বিগত সরকারের আমলে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বন্দর পরিচালনার মতো সংবেদনশীল দায়িত্ব দেওয়ার এখতিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আছে কিনা এটা বোদ্ধা ও অংশীজনদের প্রশ্ন। অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারের আলাপ ছাড়াও এ নিয়ে আরও অনেক প্রসঙ্গ এবং দৃষ্টিকোণ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার দাবি রাখে।
চট্টগ্রাম বন্দরে তিনটি টার্মিনালের অধীনে ১৯ টি জেটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি)-এর অধীনে ১২ টি জেটি, চট্টগ্রাম কার্গো টার্মিনাল (সিসিটি)-এর অধীনে ২ টি জেটি, নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-এর অধীনে ৫ টি জেটি। এই ১৯ টির মধ্যে ৬ টিতে বাল্ক জাহাজের জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয় আর বাদবাকি ১৩ টি জেটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। এর বাইরে বিশেষায়িত আরো কতগুলো জেটি আছে যা বিশেষ বিশেষ ধরনের পণ্য খালাসের কাজে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের আয় থেকেই যাবতীয় ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করা হয়। লাভজনক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের ২০২৩ সালে রাজস্ব আয় ছিল ৪ হাজার ১৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। এক বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ৮৯০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের রাজস্ব উদ্বৃত্ত ২ হাজার ৯৪৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের তুলনায় পরের বছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৭.৪২ শতাংশ ও বাল্ক কার্গোতে ৩.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বন্দর ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের জোরালো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে এসে গতিশীলতা পায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সুবাদে। ওই সরকারটি নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে, তবে এই কাজটির জন্য প্রশংসা তাদের প্রাপ্য। তখন বন্দরে সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙে ভুয়া শ্রমিকের ব্যয় চার কোটি থেকে দেড় কোটিতে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বার্থ অপারেটর সিস্টেম প্রবর্তন করে বন্দরে প্রতিযোগিতামূলক সেবাক্ষেত্র তৈরি ও গতিশীলতা আনয়ন করে তৎকালীন এলাকাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা ইউনিট। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ টি বার্থ অপারেটর চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থগুলো পরিচালনা করছে, ৩২ টি বার্থ অপারেটর বহির্নোঙরে বড়ো জাহাজ থেকে ছোটো জাহাজে লাইটারেজ করে মালামাল খালাসের কাজ করছে। এখানে উল্লেখযোগ্য, যাদের উদ্যোগে বন্দর ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন ঘটে তারা কেউই বন্দর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা বা জ্ঞান রাখতেন না। তথাপি সদিচ্ছা ও আন্তরিক উদ্যোগে গৃহীত পদক্ষেপের সুবাদে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজগুলোর টার্ন এরাউন্ড টাইম তখন ১৪ দিন থেকে ২.৩ দিনে নেমে এসেছিল। জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাধ্যতামূলক আইডল টাইম বাদ দিলে যা প্রকৃতপক্ষে আরো কম। এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এনসিটির।
পূর্ব-উদ্যোগ সূত্রে ২০০৭ সালেই চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালটি (এনসিটি) চালু হয়। এর একপাশে সিসিটি এবং অন্যপাশে গুরুত্বপূর্ণ নেভাল বেইজ, মাঝখানে ১০০০ মিটারের এই টার্মিনালে ৫ টি জেটিতে ১০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশ, ১৩ লাখ কন্টেইনার, হ্যান্ডলিং করে টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে বন্দরের সবচেয়ে অর্থকরী অংশ হিসেবে কাজ করছে। টার্মিনালটি বর্তমানে বছরে ১,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। ২০০৭ সালে দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন না হলেও কৌশলগত সক্ষমতা বিবেচনায় সাইফ পাওয়ার টেক নামের দেশি একটি প্রতিষ্ঠানটিকে এনসিটি এবং সিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কাজে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে অংশীদার হিসাবে চট্টগ্রামের সেই সময়কার সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মালিকানাধীন এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড ও নোয়াখালী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সের সম্পৃক্ততা নিয়ে তখন বেশ আলোচনা হয়েছিল। বর্তমানে চবকের সবচেয়ে লাভজনক এই টার্মিনালটি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ অংশীজনদের বৃত্ত ছাড়িয়ে আপামর জনসাধারণের মনে বহুবিধ প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে উল্লেখিত তিনটি টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এর অর্থায়নে ১২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০২২ সালের জুনে টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিবিধ অনুমতি এবং অবকাঠামোগত ও কাস্টমস সেবা সংযুক্তির জন্য সময় ব্যয়সহ নানা কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বরে, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পর, টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হয়। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য চবকের সঙ্গে চুক্তি হয় সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ৯ জুন ২০২৪ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২২ বছর পিসিটি পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। পিসিটিই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম কোনো টার্মিনাল যেটা বিদেশি অপারেটরকে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়েছে। এনসিটিতে বন্দর স্থাপনা ও সকল অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি চবক নিজস্ব অর্থায়নে করলেও ৫৮৪ মিটার লম্বা, তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং একটি ডলফিন জেটি সম্পন্ন, পিসিটিতে বন্দর নির্মাণ বাদে সকল অবকাঠামোগত উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আরএসজিটির। ইতিমধ্যে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতির সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে অর্ডারকৃত চারটি এসটিএস (শিপ-টু-শোর) ক্রেন যুক্ত হলে ২০২৬ সালের প্রথম কোয়ার্টার থেকে পিসিটিতে ছয় লক্ষ কন্টেইনার (টিইইউস) হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।
এই পতেঙ্গা টার্মিনালটির সাড়ে চার লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকলেও অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখনো তা পরিপূর্ণ সচল হতে পারেনি। এই অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে পিসিটির কার্যক্রম দ্রুত সামর্থ্যের সীমানায় নিতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে ক্রিয়াশীল নেতিবাচক শক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি তা গোটা বন্দরের অগ্রসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সত্যিকারের ভূমিকা রাখার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হতে পারতো এটাই। কেননা পিসিটির যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত ও দূরীকরণের কাজগুলো না করে নতুন কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে আরো টার্মিনাল ইজারা দিলে পারফরম্যান্স সক্ষমতার সীমানা ছাপিয়ে যাওয়ার বদলে নিচে নেমে আসার সম্ভাবনাই জোরালো। আর যদি কর্তৃপক্ষ বলতে চায় যে, অমনটা হবে না; তাহলে পিসিটির কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করে তাদের আগে প্রমাণ করতে হবে যে তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বন্দরকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করে গতিশীল করতে পারঙ্গম।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, সীমিত আকারে চালু হওয়া এই টার্মিনালের সেবাগ্রহীতা অংশীজনরা নতুন এই টার্মিনালটির কর্মপদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করছেন। পিসিটিতে একদিকে যেমন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা কমেছে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে, পাশাপাশি মাথাব্যথা কমছে সেবাগ্রহীতাদেরও। বন্দরের অন্য সব টার্মিনালের মতো আমদানি রপ্তানি কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেবিলে টেবিলে ছুটতে হচ্ছে না শিপিং এজেন্ট এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টদের, ফলশ্রুতিতে তাদের মানবসম্পদ ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় কমে আসছে। অংশীজনদের এই সুফল পাওয়ার পাশাপাশি চবকের নেট আয় যদি বন্দরের অন্যান্য টার্মিনালের সমানুপাতে থাকে তাহলে টার্ন এরাউন্ড টাইম এবং নির্ঝঞ্ঝাট কর্মপদ্ধতি ইতিবাচক প্রমাণিত হলে বেদেশি অপারেটর নিয়োগের পক্ষে যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্ত সেই যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হবার আগে বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সফল এনসিটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ মোটেই যৌক্তিক ও বিজ্ঞতাপূর্ণ নয়।
এনসিটি আর পিসিটিই কিন্তু শেষ কথা নয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনের অন্তত ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। মার্কস গ্রুপ লালদিয়া চর এলাকায় নির্মাণ করছে এসটি কন্টেইনার টার্মিনাল। টার্মিনালটি নির্মিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত পিপিপি নীতিমালা অনুসরণ করে। মাতারবাড়ি ডিপ সি পোর্ট নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজার জেলার মহেশখালিতে। জাইকার অর্থায়নে এর নির্মাণ কাজ করছে জাপানি জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশন কো. লিমিটেড এবং টোয়া করপোরেশন। আশা করা হচ্ছে আগামী তিন থেকে চার বছরের কধ্যে এটার কার্যক্রম শুরু হলে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এই বন্দরে ভিড়তে শুরু করবে। এই প্রকল্পগুলোরও আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বে টার্মিনাল প্রোজেক্টের। ২০১৪ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্প উদ্বোধন হলেও ভূমি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবিধ সংকট ও পুনঃ পুনঃ প্রকল্প পরিকল্পনায় পরিবর্তন হেতু এর অগ্রগতি ধীর। ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী আরো চার থেকে পাঁচ বছর লাগবে এর টার্মিনালগুলো চালু হতে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে তিনটি কন্টেইনার টার্মিনালে ১৩ টি জেটি নিয়ে এই প্রকল্প চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। ২০২৪ সালে এই বে টার্মিনাল প্রকল্পেই বিনিয়োগ হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
এরকম প্রকল্পগুলোতে বিওটি (বিল্ড অপারেট এন্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে। তাতে দেশের অর্থব্যয় ছাড়াই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু চবকের অর্থায়নে সবচেয়ে সফল ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো পারফর্ম করা এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ হাজার কর্মীর জীবিকা অনিশ্চিত করার পাশাপাশি হাজারো প্রশ্নের উদ্রেক করে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন যদি উড়িয়েও দিই, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়ে এনসিটি থেকে বর্তমানের চেয়ে চবকের কি পরিমাণ আয় প্রবৃদ্ধি ঘটবে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ ও নিশ্চয়তা ছাড়া এমন উদ্যোগ গ্রহণের কোনো যুক্তি নেই। এর চেয়ে বন্দর পরিচালনায় লুক্কায়িত অসংখ্য প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অধিকতর প্রয়োজন। প্রয়োজন চবকের সর্বমোট কার্গোর ৭০ ভাগ কার্গোর যোগান দেওয়া ঢাকা অঞ্চল ঘিরে আইসিডি ও আইসিটিগুলো কার্যকর ভাবে সচল করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পরিধি বাড়ানো। বন্দরের কন্টেইনার অকুপেন্সি থ্রেট সামাল দেওয়ার নতুন ও কার্যকরী পথ ও পন্থা উদ্ভাবন এবং প্রয়োগে সচেষ্ট হওয়া। প্রয়োজন নতুন টার্মিনাল পিসিটিতে যে কর্মপদ্ধতি চালু হয়েছে সেই একই পদ্ধতি বন্দরের সর্বত্র চালু করে বন্দরের কার্যক্রমকে অংশীজনদের জন্য সাশ্রয়ী, গতিশীল ও নির্ঝঞ্ঝাট করার দ্রুত ও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। সেইসঙ্গে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের বাড়তি সক্ষমতা কাজে লাগাবার মতো শিল্পখাত প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখার যাবতীয় উদ্যোগ-আয়োজনে জোর ক্রিয়াশীল হওয়া। অন্যথায় এনসিটি লিজ দেওয়ার মতো উদ্যোগকে সুচিন্তিত ও গ্রহণযোগ্য মনে করার বদলে উদ্যেশ্যপ্রণোদিত ও স্বার্থকেন্দ্রিক বলেই বিবেচনা করবে সবাই।