Published : 28 May 2025, 10:10 PM
যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়কে স্বাগত জানানোয় জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান।
বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, “দিনের শেষে ভোটেই তো দাঁড়াতে হবে আপনাদের। জামায়াতকে বুকের সাথে আগলে রেখে, রাজাকারের ‘বেকসুর খালাসকে’ সেলিব্রেট করে আপনারা আমাদের ভোট চান?”
জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন সায়ান। আন্দোলন নিয়ে গান করে মানুষকে উদ্ধুদ্ধও করেছিলেন তিনি। ফলে সায়ানের এমন বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটাই আমার আপাতত: রাজনীতি, যে এরপর এই নতুন দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে থেকে বর্জন করলাম। এইটুকু করার কথা ভেবেই নিজের অশান্ত মনকে আমি খানিকটা শান্তি দিতে পারছি।
“আগামী নির্বাচনে আমি এনসিপি, জামায়াত- এই সমমনা দলগুলোকে ভোট নিজে তো দেবই না, বরং মানুষকে অনুরোধ করব, যেন তারা এই দলগুলো থেকে দূরে থাকেন। একজন একক ব্যক্তি হিসাবে এটাই আমার সাধ্য। আই উইল নেভার সাপোর্ট এনসিপি।”
ফেইসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার সন্ধ্যায় সায়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার যা কথা, তা ফেইসবুকেই লিখে দিয়েছি।”
কালবেলা অনলাইনের ফেইসবুকে ‘এটিএম আজহারুলের মুক্তিতে বামপন্থি শিক্ষার্থীর ক্ষোভ’ শিরোনামের একটি ভিডিও সংবাদ নিজের ওয়ালে পোস্ট করে সায়ান বলেছেন, “জামাতের সাথে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করে ‘ভোটের রাজনীতি’ করতে গিয়ে এই দেশে কিছুদিন আগেই একটা বড় দলের ত্রাহি মধুসূদন দশা হয়েছিল।”
নতুন দল এনসিপির সার্জিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ প্রথম থেকেই তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ‘স্পষ্ট করেছেন’ মন্তব্য করে সায়ান তাদেরকে ‘ধন্যবাদ’ জানান।
এই সংগীতশিল্পীর ভাষ্য, “একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামায়াত চিনি না? আলবদর চিনি না? বীরাঙ্গনার ব্যাথা বুঝি না? এই দেশের ছোট ছোট বাচ্চারাও, ইতিহাসবিদদের মতন দিন তারিখের রেফারেন্স দিয়ে জামাতের জন্ম ইতিহাস বলতে পারবে না হয়ত। কিন্তু জামায়াত কী, তাদের আদর্শ কী, তারা এই দেশের মানুষকে নিয়ে কী করতে চায়, তা আজকে সকালে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাও কালকে বিকালের মধ্যে শিখে যায়।”
এনসিপি সেই জায়গাটা ‘ধরতে পারেনি’ মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, এটা তাদের ‘বুদ্ধিমত্তার নির্দেশক’।
“তারা নতুন দেশ গড়ার কথা বলে নিজেদের ভোটের জন্য জামায়াতকে বুকে টেনেছে বলে মনে হয়। আবার তাদের আরেকটি সঞ্চয় হল ‘আওয়ামী-ঘৃণা’। আজকে দেশে অনেক অন্যায় ঘটছে। তাদের সেসবে হেলদোল নাই। কিন্তু জামায়াত আর আলবদরকে ভালোবাসায় তারা আগুয়ান। ধন্যবাদ এই স্বচ্ছতার জন্য।”
জুলাই আন্দোলনের সময় সায়ান গেয়েছিলেন 'ভয় বাংলায়’ এবং ‘হুঁশিয়ারী’ শিরোনামের গান। তার গাওয়া 'আমিই বাংলাদেশ' গানটিও আন্দোলনের সময় খুবই আলোচিত হয়েছিল।
সায়ান ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “আমি প্রতি মুহুর্তে নিজের রাজনীতিকে পরিবর্তন করার পক্ষে। আজকে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করি না, মাটির প্রশ্নে। সেই হিসাবে আমার রাজনৈতিক-ইমান খুব তরল এবং সেটাই আমি চাই।
“নাহিদরা যখন বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল গত জুলাইতে, ওদের জন্য ভালোবাসা ছিল, সমর্থন ছিল। সেদিন সেটাই ছিল আমার রাজনীতি। ওদের সেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো, সেটাকে সেই সময়ের সত্যিকারের দেশপ্রেম, আর মানুষ প্রেম, মাটি-প্রেম মনে হয়েছিল। তার জন্য আমি একটুও দুঃখিত হব না কোনোদিন। আমার সেইদিনের সমর্থনের জন্য আমি কোনোদিন অনুতপ্ত হব না। নেভার।”
সম্প্রতি নরসিংদীর কলেজ শিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনকে বদলি করার বিষয়ে এনসিপির নীরবতা নিয়েও সমালোচনা করেন সায়ান।
এই সংগীতশিল্পী বলেন, “গত কয়েক মাসের তাদের অনেক আচরণ, অনেক কিছু দেখতে দেখতে দেখছি, আজকে সেই একই দলের ছেলেমেয়েরা যে আজহারের বেকসুর খালাসকে উদযাপন করল, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন করল, এমন কি লজ্জায় বা কৌশলে চুপ করে থাকল না, প্রকাশ্যে সমর্থন করল, নাদিরা ইয়াসমিনের অন্যায়ভাবে বদলির বিরুদ্ধে একটা কথাও বলল না।”
সায়ান তার ফেইসবুক পোস্টে অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মাহফুজ আলম এবং এনসিপি নেত্রী ডা. তাসনিম জারাকে ট্যাগ করেছেন।