Published : 29 May 2025, 12:33 AM
মাত্রই তখন দারুণ একটি ছক্কা মেরেছেন লিটন কুমার দাস। দল তাকিয়ে তার ব্যাটেই। পরের ডেলিভারিও মারার মতোই, একদম শর্ট। কিন্তু শাদাব খানের সেই ডেলিভারিই পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে তুলে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। হতাশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। দলের সম্ভাবনাও যেন মিলিয়ে গেল সেই মুহূর্তেই।
বড় ব্যবধানে পরাজয়ের ম্যাচে এমন একটি আউট নিয়ে হাহুতাশ বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তখনও বাকি ছিল আট ওভার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি যতক্ষণ ছিলেন, কিছুটা আশাও জিইয়ে ছিল। তার বিদায়ের পর দলও ক্রমে ছিটকে পড়ে লড়াই থেকে। রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু করে পাকিস্তান।
লাহোরে বুধবার অধিনায়ক সালমান আলি আগার ফিফটির সঙ্গে হাসান নাওয়াজ ও শাদাব খানের কার্যকর ইনিংসে ২০ ওভারে ২০১ রান তোলে পাকিস্তান। এই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রথমবার ২০০ ছুঁতে পারল তারা।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৬৪ রানে। অথচ লিটনের বিদায়ের আগে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ১০০!
৩০ বলে ৪৮ রান করেন লিটন। শেষ দিকে ২০ বলে ৩৬ করে একটু ব্যবধান কমান জাকের আলি।
এক বছর পর পাকিস্তানের জার্সিতে ফিরে ৫ উইকেট শিকার করেন হাসান আলি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই স্বাদ পেলেন তিনি প্রথমবার। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের কোনো বোলারের প্রথম ৫ উইকেটও এটিই। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা যদিও শাদাব খান।
পাকিস্তানের নতুন কোচ মাইক হেসনের পথচলা শুরু হলো জয় দিয়ে।
ম্যাচের শুরুটা ছিল নাটকীয়। দ্বিতীয় বলেই শেখ মেহেদি হাসানকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে একটুর জন্য আউট হননি ফাখার জামান। তবে পরের বলেই টাইমিংয়ে গড়বড় করে বোলারকে সহজ ক্যাচ দেন সাইম আইয়ুব। প্রতিভাবান এই বাঁহাতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার পেলেন ‘গোল্ডেন ডাক।’
ফাখারও তাকে অনুসরণ করেন পরের ওভারেই। দারুণ ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউ করেন শরিফুল ইসলাম। পাঁচ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় পাকিস্তান।
শরিফুলের পরের ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মোহাম্মাদ হারিস। পরের ওভারে মেহেদিকে তিনটি চার মারেন সালমান।
প্রথম তিন ওভারে ১২ রান তোলা পাকিস্তান পরের তিন ওভারে আদায় করে ৪০ রান।
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই তানজিম হাসানের বলে লং অনে ধরা পড়েন হারিস (১৮ বলে ৩১)। তবে পাকিস্তানের ধারা থামেনি। সালমানের সঙ্গে হাসান নাওয়াজ যোগ দিয়ে এগিয়ে নেন দলকে।
তানজিমকে টানা তিন বলে এক ছক্কা দুই চারে সালমান ফিফটিতে পা রাখেন ২৯ বলে। নাওয়াজ চড়াও হন রিশাদ হোসেনের ওপর। ঝড়ের বেগে ফিফটি আসে জুটিতে।
৬৫ রানের জুটি ভাঙে সালমানের (৩৪ বলে ৫৬) বিদায়ে। হাসান মাহমুদের ফুল টস কাভারে তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
নাওয়াজের আউটও ছিল আলগা শটে। রিশাদকে ছক্কার পর টানা দুটি চার মারার পর ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি আলতো করে।
গত মার্চে নিউ জিল্যান্ড সফরে এক ম্যাচে ৪৫ বলে ১০৫ রানের ইনিংস খেললেও অন্য চার ইনিংসের তিনটিতে শূন্য ফিরেছিলেন তিনি, একটিকে করেছিলেন এক রান। সেবার ইনিংস শুরু করেছিলেন সব ইনিংসে। এবার মিড অর্ডারে নেমে করলেন ২২ বলে ৪৪। রিশাদকেই তিনি মেরেছেন তিন ছক্কা দুই চার। আরেকটি ছক্কা হাসান মাহমুদের বলে।
সালমান ও নাওয়াজের বিদায়ের পর পাকিস্তানের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। অনিয়মিত স্পিনার শামীম হোসেন এই সময় দারুণ বোলিং করেন। রানের জন্য অস্থির হয়ে উইকেট হারান খুশদিল শাহ (১০ বলে ৫)।
ইনিংস আবার গতি পায় শাদাব খানের ব্যাটে। রিশাদের স্পেল শেষ হয় দুই ছক্কা এক চার হজম করে। ইনিংসের শেষ ওভারে শাদাব মারেন দুটি চার। একটু জন্য ফিফটি পাননি তিনি (২৫ বলে ৪৮), তবে দল পেরিয়ে যায় দুইশ।
ক্যারিয়ারের আগের ২৫ ম্যাচের স্রেফ দুটিতে এক ওভার করে বোলিং করেছিলেন শামীম। এবার এক ম্যাচেই পুরো চার ওভার বোলিং করেন, প্রথম উইকেটের স্বাদও পান। বড় ভরসা রিশাদ স্পর্শ করেন নিজের সবচেয়ে খরুচে বোলিং (৪-০-৫৫-০)।
শেষ তিন ওভারে ৪২ রান তোলে পাকিস্তান।
রেকর্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয় প্রথম ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে তানজিদ হাসানের ছক্কা ও পারভেজ হোসেন ইমনের বাউন্ডারিতে।
হাসান আলির স্লোয়ার ধরতে না পেরে পারভেজ বিদায় নেন ওই চার রানেই। তবে তানজিদে ছক্কার তেষ্টা দেখা যায় আবারও। লেগ স্পিনার আবরার আহমেদকে বোলিংয়ে স্বাগত জানান তিনি মাথার ওপর দিয়ে পরপর দুটি ছক্কায়।
এরপর হাসানকেও দুটি চার মারেন তিনি। কিন্তু পরের বলেই বোল্ড। আরও একবার তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যু (১৭ বলে ৩১)।
লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের জুটির শুরুটা ছিল মন্থর। ১০ ওভার যখন শেষ হলো, হৃদয়ের রান ১৭ বলে ১৫, লিটনের ২১ বলে ২৫।
এরপর গা ঝাড়া দেন লিটন। দুটি ছক্কা মারেন তিনি রউফের এক ওভারে। এরপর শাদাবকেও যখন ছক্কায় ওড়ালেন, পাকিস্তান তখন সত্যিকারের শঙ্কায়। কিন্তু আরও অনেকবারের মতো এবার সম্ভাবনার শেষ করলেই লিটন নিজেই।
আরেক প্রান্তে হৃদয় তখনো ধুঁকছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২২ বলে ১৭ রানের দৃষ্টিকটূ ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি।
এরপর গোটা দলের কেবল পিছু হটা। শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেনরা ব্যর্থ পুরোপুরি। হার নিশ্চিত হওয়ার পর জাকের আলির লড়াইয়ে কিছুটা কমে ব্যবধান।
বাংলাদেশের শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দু অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শেষ উইকেটটি নিয়ে হাসান আলি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
সিরিজের পরের ম্যাচ শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ২০১/৭ (ফাখার ১, সাইম ০, হারিস ৩১, সালমান ৫৬, নাওয়াজ ৪৪, শাদাব ৪৮, খুশদিল ৫, ফাহিম ১১*, হাসান ১*; শেখ মেহেদি ৪-০-৩৬-১, শরিফুল ৩-০-৩২-২, হাসান ৩-০-২৪-১, তানজিম ২-০-২২-১, রিশাদ ৪-০-৫৫-১, শামীম ৪-০-৩১-১)
বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ১৬৪ (তানজিদ ৩১, পারভেজ ৪, লিটন ৪৮, হৃদয় ১৭, জাকের ৩৬, শামীম ৪, রিশাদ ৪, তানজিম ১, শেখ মেহেদি ২, হাসান ৯*, শরিফুল ৫; ফাহিম ৩-০-১৮-১, হাসান ৩.২-০-৩০-৫, আবরার ৪-০-৩৫-০, রউফ ৩-০-৩৬-০, শাদাব ৪-০-২৭-২, খুশদিল ১-০-৬-১, সালমান ১-০-১২-১)।
ফল: পাকিস্তার ৩৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : শাদাব খান।