Published : 27 May 2025, 08:48 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও ঘটনার ‘মোটিভ’ জানাতে পারেননি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকালের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার প্রথমে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামকে বিস্তারিত বলার অনুরোধ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নাসিরুল ইসলাম প্রাথমিক তদন্তে এটিকে ‘তাৎক্ষণিক’ ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড বলেন এবং আসামিরা রিমান্ডে আছে জানিয়ে নেপথ্যের কারণ জানার ‘চেষ্টা করবেন’ বলে জানান।
কিন্তু রহস্য উদঘাটনের যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “মামলা তো ডিটেক্ট হয়ে গেছে।”
এ সময় তিনি ডিবির হাতে রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, মেহেদী হাসান, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন নামে আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে ঘটনাটি ‘গুরুত্বের’ সঙ্গে নিয়ে পুলিশের নানা তৎপরতার কথা তুলে ধরেন।
এর মধ্যে নাহিদ নাহিদ হাসান পাপেল ঘটনার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর রাব্বি ও মেহেদীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আগের দিন সোমবার সোহাগ, হৃদয় ইসলাম ও রবিনকে রিমান্ডে পায় ডিবি। সেদিন রিপন আদালতে দোষ ‘স্বীকার করে’ জবানবন্দি দেন এবং সুজন সরকারকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
গত ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।
হত্যার ঘটনায় তর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
সেই মামলার অগ্রগতি জানাতে মঙ্গলবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডাকা হয় সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে ‘সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের’ কথা বলেছিল ডিএমপি।
‘মোটিভের’ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার একটা চক্রের ‘নেতা’ মেহেদীর গ্রুপকে দায় দেন।
মেহেদী গ্রেপ্তার আছে এবং তার তথ্যে মাজার এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ‘সুইচগিয়ার’ উদ্ধার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বী, যার হাতে একটা ট্রেজার গান (যেটিতে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। সেটা কী, তা জানতে চান সাম্য।
“জানতে চাওয়ার একটা পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একটা পর্যায়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একটা পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডটা ঘটে।”
এই হত্যাকাণ্ডে ‘এখন পর্যন্ত’ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন ওই গ্রুপের রাব্বী নামে একজন বলে জানান তিনি।
সাম্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আপাতত যতটুকু পেয়েছি, তাতে সাম্য ও তার দুই সহপাঠী খাবারের জন্য যায়। খাবারের জন্য গেলে এটা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা।
“যখন ট্রেজার গানটা শো করে, শো করলে তাদের সন্দেহ হলে জানতে চায় বিষয়টা কী? জিনিসটা কী দেখার জন্য এবং তার কাছ থেকে এটা নেওয়ার জন্য যখন চ্যালেঞ্জ করে, তার কাছে যায়, তখন তাৎক্ষণিক তারা ঘটনাটা ঘটায়।”
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ড, আপাতত আমাদের তদন্তে এ পর্যায় পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আরও কোনো ঘটনা আছে কিনা, অন্যকোনো বিষয় আছে কিনা, সেটা নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার ‘মূল আসামি’ মেহেদী রিমান্ডে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রিমান্ডে আসার পর মূল মোটিভটা কী ছিল, তার কাছ থেকে আমরা বের করার চেষ্টা করব। নেপথ্যে অন্য ঘটনা আছে কিনা, সেটার বিষয়ে আমাদের নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। আমরা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে, যেখানে যে ধরনের কানেকশন আছে, সমস্ত কানেকশন খুঁজে দেখব, ফাইনালি নেপথ্যে অন্যকোনো কারণ আছে কিনা।”
তবে ঘটনাটি ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে মনে করছেন সাম্যর বড় ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘কারণ’ না জানতে পেরে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ডে হতাশ। কী কারণে মারল, মোটিভটা কী?”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাদক কারবার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল ইসলাম সেখানে তিনটি গ্রুপের কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা তদন্ত করতে গিয়ে যেটা দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওদের কথিত ভাষায় যেটা ‘গ্রিপ’ বলে; তিনটা ভাগে ভাগ করা। একটা গ্রিপ হল তিন নেতার মাজারের এখানে, আরেকটা মাঝখানে, আরেকটা ছবির হাটে। তিনটা গ্রিপের তিনটা গ্রুপ সেখানে দায়িত্বে আছে। তারা মাদকব্যবসা করে, এটা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
“একটা গ্রিপের দায়িত্বে মেহেদী। গ্রেপ্তার সবাই তার গ্রিপের। আরও দুই গ্রুপ, তারা তাদের কার্যক্রম চালায় আমরা জানি।“
গ্রিপগুলার নাম ‘তদন্তের স্বার্থে’ না বললেও তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ‘মাদকমুক্ত’ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত বলেন, “বিশ্বব্যাপী যেখানে মাদক ব্যবসা বা মাদকের ইউজার, সেখানে অস্ত্র থাকে। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন, সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবসা আছে। মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক ওইখানে অস্ত্র আছে।”
ঢাকা শহরে সম্প্রতি কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। ফলে ক্রাইম সিচ্যুয়েশন, অপরাধের যে চিত্র সেটা প্রমাণ করে যে, অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
বাড্ডায় বিএনপি নেতার খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদেরকে দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলব, এরকম কোনো জাদুমন্ত্র আমাদের নাই।”
আরও পড়ুন