Published : 28 May 2025, 10:59 PM
খসড়া টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে এ খাতের মাঝের স্তর ‘পুরোপুরি বিলীন’ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী।
বুধবার রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতিমালা: কোন পথে এনটিটিএন এর ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে টেলিকম খাতের প্রতিবেদকদের সংগঠন টিআরএনবি।
এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যানের ভাষ্য, “এরপর ছোট অপারেটর যারা আছে, আইএসপি যারা আছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে, এখানে যে বিনিয়োগটা আছে সেটাও নষ্ট হবে।”
এনটিটিএন নিয়ে পুরনো টানাপোড়েনের মধ্যে এ খাতের নতুন নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্স নীতিমালার এ খসড়া সম্প্রতি প্রকাশ করে সরকার। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে এ খাতের মধ্যস্তরে থাকা দেশি কোম্পানিগুলো।
তাদের প্রধান আপত্তি, এ খসড়ায় আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি, জাতীয় পর্যায়ে কানেক্টিভিটি এবং অ্যাকসেস কিংবা খুচরো সেবার স্তরগুলো নিয়ে।
দ্বিতীয়ত, নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশি কোনো উদ্যোক্তার এক স্তরের লাইসেন্স থাকলে তিনি আরেক স্তরের লাইসেন্স পাবেন না। অথচ বিদেশি উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এরকম কোনো বাধা ধরা নিয়মের কথা বলা হয়নি। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিশেষ সুযোগ পাবে। তাদের অভিযোগের আঙ্গুল মোবাইল অপারেটরগুলোর দিকে।
আইআইজি, এনটিটিএনসহ দেশি কোম্পানির সংগঠনগুলো খসড়া নীতিমালার বিরোধিতা করছে।
গত রোববার ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ ব্যবসায়ীরা খসড়া এ নীতিমালার বিরোধিতা করেন। তাদের ভাষ্য, সরকারের নতুন লাইসেন্সিং নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে এর মধ্যস্তরে থাকা দেশি কোম্পানিগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
এমন প্রেক্ষাপটে বুধবারের কর্মশালায় ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল বলেন, স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগকে মাথায় নিয়ে এ কাঠামো করেছিল তখনকার সরকার। অনেকগুলো এনটিটিএন, আইআইজি, আইটিসি, আইসিএক্স সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কোম্পানি তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগের কথা যদি বলতে হয় তাহলে এইসব ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটররা বিনিয়োগ করতে পারেনি। আমাদের বর্তমান কাঠামোতে তাদের ফাইভ জি চালুর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
“টেলিকমের ইকোসিস্টেম (ব্যবসা পরিবেশ) বলতে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইটিসি, এনটিটিএন, মোবাইল অপারেটর, আইআইজি, আইএসপি অর্থাৎ আমরা সবাই। এই নীতিমালার আওতায়ই কিন্তু এই ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। এখন আগের নীতিমালাটি এই ইকোসিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয় বলে যে নীতিমালাটি করছেন সেটি ইকোসিস্টেমের সঙ্গে মিলবে না বলে ভেঙে দুমড়ে নতুন ইকোসিস্টেম তৈরির চেষ্টা করছেন।
“কিন্তু বর্তমানে যে নীতিমালাটি হচ্ছে তাতে এই মাঝের স্তরটাকে পুরোপুরি বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এরপরে ছোট অপারেটর যারা আছে, আইএসপি যারা আছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে, এখানে যে বিনিয়োগটা আছে সেটাও নষ্ট হবে।”
কর্মশালায় ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, নতুন নীতিমালায় দেশি খাতগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া উচিৎ ছিল।
২০১০ সালে টেলিযোগাযোগ খাতে ন্যাশনওয়াইড টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়। এসব লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সেসময় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল। ওই কোম্পানিগুলো টেলিকম অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের অনুমোদন পায়।
এর আগে পর্যন্ত মোবাইল অপারেটরগুলো নিজেরাই ফাইবার কেবল বসিয়ে নিজেদের মত নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে পারত। এনটিটিএন কোম্পানিগুলো এই লাইসেন্স পাওয়ার পর মোবাইল অপারেটরগুলো সেই ক্ষমতা হারায়, শুরু হয় এক নতুন টানাপোড়েন।
এনটিটিএন কোম্পানিগুলো পরিবাহিত ডেটার পরিমাণ অনুযায়ী অর্থ আদায় করতে চায়। আর মোবাইল ফোন অপারেটররা চাইছিল খালি ফাইবার বা ডার্ক ফাইবার ভাড়া নিয়ে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডেটা পরিবহন করতে। এজন্য ডেটা পরিবহনের সুবিধা পেতে তারা ফাইবারে ডিডব্লিউডিএম প্রযুক্তি (ব্যান্ডউইডথ বাড়ানোর যন্ত্র) বসাতে চাচ্ছিল। ফাইবার কেবলের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে মোবাইল অপারেটররা দেশে ফাইভ জি সেবা চালু করতে পারছে না বলে বহুদিন ধরেই যুক্তি দেখিয়ে আসছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এনটিটিএন ও মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে পুরনো সেই টানাপোড়েনে নতুন মাত্রা দেখা দেয়। গত মার্চে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ডার্ক ফাইবার ও ডিডব্লিউডএম প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।