Published : 28 May 2025, 11:56 PM
তরুণ প্রজন্মকেই ‘নিশানা’ করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের নানা ‘কূটকৌশল’ চালিয়ে যাচ্ছে, এমন অভিমত উঠে এসেছে এক ভার্চুয়াল সভায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে বুধবার ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা’ ও ‘অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা’ আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সভার শুরুতেই প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রামস হাসান শাহরিয়ার মূল উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, “ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তামাক কোম্পানি নতুন প্রজন্মকে মোহনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে।
“শিশু বা কিশোর-কিশোরী আজ ঠোঁটে তামাকপণ্য তুলে নিচ্ছে, কাল সে-ই পরিণত হচ্ছে তামাক কোম্পানির আমৃত্যু ভোক্তায়। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় বিদ্যালয়ের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধ এলাকার মধ্যে অবস্থিত মোট ৫০৭টি মুদি দোকানের ৪৮৭টিতেই চকলেট, ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ইত্যাদির পাশেই তামাকপণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে, যা শিশুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।”
তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা থেকে সিগারেট বাদ দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাক ও নিকোটিন পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
প্রতি বছরের মত এবারও ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’।
সভায় মূল উপস্থপনার বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, “স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অবশ্য তামাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন একতাবদ্ধতা।”
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ক্যান্সারের অন্যতম কারণ তামাক পণ্য। এটা পরিহার করা এখন সময়ের দাবি।
“আমরা যত তামাক পণ্য এড়িয়ে চলবো তত ভাল থাকবো।”
দ্রুত আইন সংস্কার করাসহ তামাক কোম্পানির ‘কূটকৌশল’ সম্পর্কে সচেতন থাকার আহবান জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অধ্যাপক অনুপম হোসেন।
তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাক ও নিকোটিন পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।”
সভায় তরুণ প্রজন্ম সুরক্ষায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করা দাবি জানানো হয়। এছাড়া আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে মূল্যস্তরের সংখ্যা চারটি থেকে তিনটিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়।
আত্মার সহ-আহ্বায়ক নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখেন- বিসিআইসি এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর সাবেক সমন্বয়কারী মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, ‘প্রত্যাশা’ এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন ও সহ-আহ্বায়ক মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।